বাণিজ্যিক কৃষিতে কি খেঁজুর গাছ টিকে থাকতে পারবে?

বাণিজ্যিক কৃষিতে কি খেঁজুর গাছ টিকে থাকতে পারবে?

শীতের সকালে খেজুরের টাটকা রস পান করা এবং খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েস খাওয়া গ্রাম বাংলার আবহমানকালের ঐতিহ্য। আগে খেজুর পাতা রোদে শুকিয়ে ঘরে ঘরে পাটি, মাদুর, ঝুড়ি, হাতব্যাগ এবং বিভিন্ন ধরনের কারুপণ্য বানানো হত যা বর্তমানে বিরল। এসব কারুপণ্য আগে হাটে-বাজারে প্রচুর বিক্রী হত এবং তা থেকে অনেকে জীবিকাও নির্বাহ করতেন যা আজ খুব একটা চোখে পড়েনা। খেজুর ফল হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক। ফলে প্রচুর লৌহ জাতীয় খনিজ উপাদান আছে।

খেজুরগাছ একটি প্রাকৃতিক গাছ যা লাগাতে হয়না। তাই হয়ত গ্রামে গেলে আমরা আমাদের চারপাশে কিছু খেজুর গাছ এখনো দেখতে পাই। আগে গ্রামে গ্রামে জমির আইলে, কিংবা উচু টিলা বা চালার মত স্থানে প্রচুর খেজুর গাছ জন্মাতো যা এখন আর ওভাবে দেখা যায়না। ইদানিং বজ্রপাত রোধে কিছু উপযোগিতা থাকায় তালগাছ লাগানোর কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও খেঁজুর গাছ লাগানোর কথা শুনিনি কখনো। আমাদের কৃষিভূমি যেভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং আমরা যে ধরণের কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছি তাতে অদূর ভবিষ্যতে খেজুরগাছ এবং খেজুরগুড় এক দুষ্প্রাপ্য জিনিষ হয়ে উঠবে বলেই অনুমান করি। এমনকি বিলুপ্তও হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।

মুখে মুখে একটি ভয়ংকর পরিসংখ্যান প্রায়শই শোনা যায়। সেটি হলো শিল্পায়ন, নগরায়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, গ্রামে বসতি স্থাপন এমন অনেক কাজে আমাদের ফসলি জমি ফিবছর প্রায় এক শতাংশ হারে কমছে। এই হার অব্যাহত থাকলে আগামি একশত বছরের মধ্যে দেশে কোন কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। এই নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারক মহল যেমন চিন্তিত তেমনি চিন্তিত প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার ব্যাপারে। এখন চাষবাস মানে বাণিজ্যিক কৃষি। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে এই বাণিজ্যিক কৃষির আওতায় আনতে আমাদের হয়ত খুব বেশিদিন সময় লাগবে না। বাণিজ্যিক কৃষিতে কি খেঁজুর গাছ থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর অজানা হলেও আপাতদৃষ্টিতে থাকবেনা বলেই মনে হচ্ছে।

দেশের ষোল-সতের কোটি মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটাতে আমরা যতটা চিন্তিত আমাদের  প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য সংস্কৃতি রক্ষায় চিন্তা বা আগ্রহের প্রকাশ খুব বেশি দেখা যায়না। ফলস্বরূপ আমাদের প্রকৃতি থেকে প্রতিনিয়ত অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী ক্রমাগত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে যার মধ্যে অনেক মূল্যবান ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদও রয়েছে। খেজুর গাছের ক্ষেত্রে হয়ত এমন অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি কিন্তু এমন দিন যে খুব বেশি দূরে নয় সেটা অনুমান করতে কষ্ট হয়না। কারণ, আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে জীবনধারা। আমরা পাশ্চাত্য জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের অন্ধ অনুকরণ করছি। আমরা এখন পলিশ করা সাদা চালের মত আমদানিকৃত সাদা চিনি এসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। আমাদের পাটকলের মত চিনিকলও একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আখচাষে দশমাস সময় লাগে এই যুক্তিতে আখচাষকে নিরূৎসাহিত করা হচ্ছে। তাছাড়া, হালে খেজুর রসে নিপা ভাইরাসের আমদানি ঘটেছে। শীতের সকালে তাজা খেজুর রস কিংবা খেঁজুর রসের ক্ষীর খাওয়ার অভ্যাস আমাদের শহুরে নতুন প্রজন্মের নেই বললেই চলে। নিপা ভাইরাসের ভয় ক্রমশঃ গ্রামেও সঞ্চারিত হয়ে কাঁচা খেঁজুর রসের চাহিদা অচিরেই নিঃশেষ হবে। তেমনি সাদা চিনির আগ্রাসনে খেঁজুর গুড়ও দুঃষ্প্রাপ্য হয়ে উঠবে একসময়।

আমাদের ছোটবেলায় ময়মনসিংহ অঞ্চলে আখের গুড় যা ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি হিসেবে খ্যাত এবং খেজুরের জ্বালানো রস (তরল গুড়) – এ দুটিই ছিল মিষ্টিজাতীয় খাদ্য তৈরির অত্যাবশ্যক উপকরণ। কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি এই গুড়ের প্রচলন সারাদেশেই ছিল। যশোর, নাটোর, রাজশাহী অঞ্চলের খেজুরের ঝোলা গুড় বা দানাগুড় এবং পাটালি গুড় এ দুটোর কদর ব্যাপক। পাটালি গুড়ের সংরক্ষণ ও পরিবহন সহজতর হওয়ায় তা সারাদেশেই সহজলভ্য ছিল। আজও এই গুড়ের চাহিদা থাকায় সর্বত্র ভেজাল গুড়ের দৌরাত্ম। সাদাচিনির আগ্রাসনের পাশাপাশি এ ধরণের ভেজাল আতঙ্ক খেজুর গুড়ের প্রতি দিনদিন মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে যা খেজুর গুড় বা গাছের বিলুপ্তির আশংকাকে বাড়িয়ে তুলছে।

খেজুর রস বা গুড় হারিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে এর সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়া যার পুরোটাই কায়িক শ্রমনির্ভর। উচু গাছে উঠে নিয়মিত গাছ কাটা এবং খেজুর রস সংগ্রহ করা যেমন শ্রমসাধ্য তেমনি ভয়েরও ব্যাপারও বটে। বিশেষ দক্ষতা ও সাহস ছাড়া যে কারও পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত আগ্রহ বা শখের বশে কিংবা শ্রেফ জীবিকার টানে গ্রামে-গঞ্জে একটি শ্রমজীবী শ্রেণি গড়ে উঠেছে যাদেরকে “গাছি” বলা হয়ে থাকে। আজকাল চাষাবাদের যান্ত্রিকীকরণের ফলে চাষের ক্ষেত্রে যেমন কায়িক শ্রমিকের সংখ্যা কমছে তেমনি আগামী দিনে এই গাছি শ্রেণি টিকে থাকবে কিনা সন্দেহ। কাজেই খেজুর রস আহরণের সহজ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প প্রযুক্তির উদ্ভাবন এখন সময়ের দাবি। পরিবর্তন দরকার গুড় তৈরির পদ্ধতিরও। অন্যথায় এই শিল্পের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।

অন্যদিকে,আমরা যেহেতু পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে ঝুকছি এবং খেজুরগাছ যেহেতু পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অংশ নয় তাই এর বিলুপ্তির আশংকা প্রবল। আমরা ক্রমেই যেভাবে ফাস্টফুড, জাংক ফুড এবং চকচকে, মুখরোচক, পলিশ করা খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি তাতে এই আশংকা অমূলক নয়। তাছাড়া, বাণিজ্যিক বিশ্বায়নের যুগে যার ব্যবসায়িক মূল্য নেই সেটাই টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে গিয়ে হারিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ থেকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে খেজুর গুড়ও হয়ত একদিন হারিয়ে যাবে।  কাজেই খেজুরগুড়সহ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উপকরণগুলোর সংরক্ষণ ও প্রসারে জোড়ালো ভূমিকা গ্রহণ করা অতীব জরুরী। আমরা যদি খেজুরগুড় খাওয়ার অভ্যাসটা ধরে রাখি তবেই হয়ত টিকে থাকবে খেজুরগুড় এবং খেজুর গাছ। আসুন খেজুর গুড় খাই, টিকিয়ে রাখি খেজুর গাছ।

বাঙালির ফুটবল জ্বর

বাঙালির ফুটবল জ্বর

বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত গোটা দেশ। আক্রান্ত গোটা বিশ্বও।  বিশ্বজুড়ে ফুটবলই একমাত্র খেলা যা সম্ভবত সকল দেশের মানুষকেই কমবেশি মাতিয়ে তুলে। বিশ্বকাপ ফুটবলকে তাই গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বলা হয়ে থাকে। ফুটবলের বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের কোন স্থান নেই, নেই এশিয়াতেও। সম্প্রতি দেশের অদম্য নারীরা সাফ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়লেও পুরুষ দলের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসনটাও নড়বড়ে। তবুও ফুটবল নিয়ে আমাদের উৎসাহের কমতি নেই। কমতি নেই উত্তেজনা আর উন্মাদনারও যা কখনো কখনো মারামারি খুনোখুনি  পর্যন্ত গড়াতে দেখা যায়। উত্তেজনার চাপে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুবরনের কথাও শোনা যায় কখনো কখনো। মিডিয়ার খবর অনুসারে এবারের বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নানাভাবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ জন, আহত হয়েছেন ২৭ জন। এটা সেমিফাইনাল পর্যন্ত খবর। আজ ফাইনালে দুই চিরপ্রদ্বিন্দ্বী একটি বিজয়ী হওয়ার পর এই সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না যা কোনক্রমেই কাম্য নয়! যাহোক, আর্জেন্টিনার ৩৬ বছর আর মেসির ২০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাপ জয়ে দল আর্জেন্টিনা ও মেসিকে অভিনন্দন!

খেলা মানেই বিনোদন। সুস্থ জীবনের জন্য বিনোদন যেমন জরুরী তেমনি জরুরি খেলাধূলা বা শরীরচর্চা। আমরা যেমন খেলা দেখে মজা পাই, বিনোদিত হই তেমনি যারা মাঠে খেলে তারাও অপার আনন্দ লাভ করে যেমন আনন্দ লাভ করতাম আমরাও আমাদের শৈশবে। আমাদের শৈশবে গ্রামাঞ্চলে চামড়ার বল সহজলভ্য ছিলোনা। চামড়ার বল কিনতে  হলে দূর থানা বা জেলাসদরে যেতে হত যা ছোটদের জন্য সহজ ছিলোনা। কারণ, তখন যোগাযোগ সহজ ছিলোনা। পাঁচ-দশ কিলোমিটার হেটে বা সাইকেলে পাড়ি দিতে হত। তাই সেকালে আমাদের খেলা হত হাতে তৈরি বলে। শিমুল তুলা পলিথিনে মুড়িয়ে  তা পাটের রশি দিয়ে জালের মত করে বেঁধে আমরা সুন্দর আরামদায়ক বল বানিয়ে ফেলতাম। সে বল খেলতে মন্দ লাগতোনা। কাপড়ে মোড়ানো এমন বলেই নাকি মেরাডোনার পায়েখড়ি হয়েছিলো। আমদের খেলার মাঠ ছিলো মূলত ধান মাড়ানোর খোলা কিংবা ফসলের মাঠ। ধান কেটে নেওয়ার পর ধানক্ষেতে খালি পায়ে আমাদের খেলা চলত। বুট জুতা পড়ে খেলা হয়নি কখনো। আমাদের ছেলে এমদাদ হকের মত ব্যাথাপায়ে তখনকার ব্যাথানাশক মালিশ জামবাক মেখে হারিকেনের মাথায় কাপড় গরম করে ছ্যাক নেওয়া ছিল তখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। একটি গোল করার জন্য সেকি কসরত! খেলার মাঠের ব্যর্থতার আক্ষেপ প্রায়শই সফলতা রূপে স্বপ্নে এসে ধরা দিত। স্বপ্নে পেলে, ম্যারাডোনা, রোনালদোর মত সবাইকে কাটিয়ে গোল করার আনন্দ ছিলো অসাধারণ। কখনো কখনো গোলমুখে গিয়ে ঘুম ভেঙ্গে নিশ্চিত গোল মিস করা আক্ষেপটাও  নিতান্ত কম ছিলোনা।

তখন অবশ্য পেলে, ম্যারাডোনা, রোনালদো কিংবা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার নামও আমাদের জানা ছিলোনা। পেলে ও ব্রাজিল  সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি “ফুটবলের রাজা” প্রবন্ধ থেকে ক্লাশ ফোর কি ফাইভের পাঠ্য বই থেকে। সেসময় ‍আমাদের জন্য বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার কোন সুযোগ ছিলোনা। ছিয়াশির বিশ্বকাপে যখন ম্যারাডোনা বিশ্ব মাতিয়েছিলেন তখনো হাতেগোনা কিছু টেলিভিশন এসেছিলো গ্রামের বাজার অবধি যেখানে সবে বিদ্যুৎ এসেছিল বলে। রাত জেগে সেই বিশ্বকাপ যারা দেখতেন তাদের মুখ থেকে শুনতাম ম্যারাডোনার গুনকীর্তন। সম্ভবত তখন থেকেই এদেশে আর্জেন্টিনার এতো সাপোর্টার সৃষ্টি হয়। ব্রাজিলের সমর্থক আগে থেকেই ছিলো আমার ধারণায় মূলত শহুরে ফুটবল বোদ্ধাদের মধ্যে। ব্রাজিলের সমর্থক বৃদ্ধিও ছিল প্রায় সমসাময়িককালে। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ১৯৯০ পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সাল অবধি ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ ফুটবল খেললেও নানান সমালোচনা, কেলেষ্কারির সাথে সাথে খেলার মানেও পড়ন্তবেলা নেমে এসেছিলো। ঠিক একই সময়ে রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, রোনালদিনহু, কাকাদের মত তারকা ফুটবলারদের কয়েক বিশ্বকাপজুড়ে সফলতা-ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের ফলে সমর্থকগোষ্ঠী আরও বৃদ্ধি পায়। এসময় জার্মানী এবং ফান্সের সাফল্য ও শক্তিমত্তার কারণে এই দুই দলের বেশ একটা সমর্থকগোষ্ঠীও তৈরি হয় বিশেষ করে জার্মানির।

আমার বিশ্বকাপ খেলা দেখা শুরু মূলত নব্বইয়ের বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিল সমর্থক হিসেবে। এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায় হওয়ার পর থেকে ফাইনাল অবধি সমর্থনের সেই আবেগ বা উচ্ছাস । তবুও খেলার মজার জন্য প্রতি ম্যাচে কোন না কোন দলের পক্ষে মৃদু হলেও সমর্থন ছিলই। আগে যখন বিশ্ব রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে অতটা ধারণা ছিলনা তখন সমর্থনের মূল মাপকাঠি ছিল ভালো দল, ভালো খেলা যেমনটা এখন আমার ছেলে করে। প্রায়শই ছেলের সমর্থন আমার বিপরীতে যায়। তাই আমি আমার মৌন সমর্থন প্রকাশ করতে চাইনা। ওর চাপাচাপিতে যখন তা প্রকাশ করতে হয় তখন সে একটু দমে যায়, উৎসাহে ভাটা পড়ে। যদিও আমি সমর্থন পরিবর্তন না করতেই তাকে উৎসাহিত করি। কারণ, তার জন্য জেতাটাই আনন্দের বিষয়। অবশ্য খেলার ক্ষেত্রে এমনটাই হওয়া উচিত – শ্রেফ বিনোদনের উপলক্ষ।

কিন্তু আমাদের দেশে ফুটবল মানে শ্রেফ বিনোদনের চেয়েও বেশি কিছু। কার্যত আমরা এক ফুটবলপ্রেমি জাতি। শুধু প্রেমিক বললে ভুল হবে। বরং পাগল প্রেমিক বলাই শ্রেয়। এমন একটা জাতি ফুটবলে কেন এতটা পশ্চাদপদ সেটাই বিপুল বিষ্ময়। ছোটবেলায় আমাদের ফুটবল উন্মাদনা ছিল আবাহনী-মোহামেডানকে ঘিরে। বর্তমান প্রজন্ম সম্ভবত এখন দেশের ক্লাবগুলোর খেলাই দেখেনা। মাঠের অভাবে খেলারও সুযোগ পায়না। আমরা জনক-জননীরাও ওদের পড়াশোনার প্রতি যতটা যত্নবান খেলাধূলার প্রতি ততটাই উদাসীন। অথচ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বা ভিনদেশি কোন দলকে পাগলের মত করে সাপোর্ট করা থেকে বুঝা যায় যে আমরা কতটা উন্মত্তভাবে ফুটবলপ্রেমি। এই প্রেমটাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব আসরে না হউক, এশিয়ায় কিংবা অন্তত দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা আমাদের অবস্থানটা সংহত করতেই পারি।

নারী ফুটবলাররা এক্ষেত্রে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ওদের অগ্রগামী হওয়ার গল্পটা পেলে-মেরাডোনা-মেসি-নেইমার-এন্টোনিদের গল্পের মতই। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বস্তি থেকে অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে বিশ্ব আসরে জায়গা করে নেওয়া এসব তারকারা এদেশের রাস্তায়-বস্তিতে বেড়ে উঠা অসংখ্য শিশুদের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। বাফুফে এদেরকে নিয়ে কাজ করলে অনেক বেশি সাফল্য আসতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

#fifa_world_cup_Qatar_2022 #Messi #Neymer #Maradona