জিজ্ঞাসা / প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর

প্রকৃতি ফুডের খাদ্য কি অর্গানিক? অর্গানিক হলে তার নিশ্চয়তা কি?

উত্তরঃ প্রকৃতি ফুডের খাদ্য অর্গানিক হলেও আমরা তা বলিনা। কারণ, আইনানুগভাবে কোন খাদ্যকে জৈব বা অর্গানিক বলতে হলে সেই খাদ্যপণ্য ফসলের মাঠ থেকে আপনার হাতে পৌছানো পর্যন্ত পুরো  অর্থাৎ উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেজিং ইত্যাদি কাজগুলো সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য মানদণ্ড মেনে করতে হয় এবং তা কোন নির্ভরযোগ্য “থার্ড পার্টি” বা এজেন্সি দ্বারা নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সনদপ্রাপ্ত হতে হয়।

উক্ত মানদণ্ড কিংবা তা অনুসরণ করে সার্টিফিকেট দেওয়ার মত কোন এজেন্সি এখনো বাংলাদেশে নেই।

 তাছাড়া, এই সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা কোন কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ির পক্ষে নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব । এতে পণ্যের দাম আরও অনেক বেড়ে যাবে।

এরকম সার্টিফিকেশনের বিপরীতে গরীব কৃষকদের জন্য সারাবিশ্বে স্বীকৃত বিকল্প একটা পদ্ধতি অবশ্য আছে যার নাম “পার্টিসিপেটরি গ্যারান্টি সিস্টেম” বা সংক্ষেপে পিজিএস। এটা করতে হলেও একটা মনিটরিং অথরিটি লাগবে এবং উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত একটা মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে যা বাংলাদেশে এখনো ওভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। কাজেই আমরা আমাদের পণ্যকে জৈব পণ্য বলিনা। তবে আগামী দিনে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সহজতর “পিজিএস” পদ্ধতি চালু করার জন্য আমাদের সর্বোত ইচ্ছে ও চেষ্টা আছে। আমরা আপনাদেরকে  এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে চাই। এজন্য সকলকে প্রকৃতির সদস্য হওয়ার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করা যাচ্ছে।  

আপনাদের পণ্য নিরাপদ বলার কারণ কি?

উত্তরঃ আমাদের পণ্য যেহেতু উৎপাদন পর্যায় থেকে প্যাকেজিং পর্যন্ত সকল ধাপে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর  কোন রাসায়নিক উপাদান যেমনঃ আন্তর্জাতিক জৈব স্ট্যান্ডার্ডে অননুমোদিত রাসায়নিক সার, বালাইনাশক, ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ (যেমনঃ ফর্মালিন,  সোডিয়াম বেঞ্জয়েট ইত্যাদি) কৃত্রিম রঞ্জকদ্রব্য, কৃত্রিম সুগন্ধি ইত্যাদি যেগুলো ক্যান্সারসহ নানান শারীরিক সমস্যার কারণ সেসব কঠোরভাবে পরিহার করা হয় এবং তা কঠোর মনিটরিং-এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় বিধায় আমরা আমাদের পণ্যকে এসব নিরিখে নিরাপদ  বলে থাকি। আদতে তা তুলনানূলক নিরাপদ বলা ভালো। কারণ, আমাদের পুরো পরিবেশটাই ক্রমে দুষিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এরূপ নাজুক অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। সবার আগে ঠিক করতে হবে যে আমরা তা চাই কিনা।

আপনাদের পণ্যের দাম এত বেশি কেন?

উত্তরঃ হ্যা, আমাদের পণ্যের দাম বাজারের সাধারণ পণ্যের তুলনায় একটু বেশি। কারণ—

ক. আমরা সর্বোচ্চ মানের পণ্য সংগ্রহ করি যার বাজারদরও সর্বোচ্চ।
খ. আমরা বিভিন্ন দাম ও মানের পণ্য একসাথে মিশাই না। ফলে আমাদের পণ্যের কস্টিং হয় সর্বোচ্চ।
গ. আমরা উৎপাদককে বা কৃষককে সর্বোচ্চ দাম দেওয়ার চেষ্টা করি।
ঘ. আমাদের পণ্য সংরক্ষণে কোন বালাইনাশক বা প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয়না বিধায় নষ্ট হওয়ার ঝুকিও বেশি।
ঙ. আমাদের পণ্যের সাপ্লাইচেইন পুরোটাই নিজেদেরকে ম্যানেজ করতে হয় এবং পণ্যের পরিমাণও কম থাকে বিধায় কস্টিং অনেক বেশি পড়ে।
চ. সর্বোপরি, বাস্তবতা হলো এই যে, আমাদের আদি দেশি ফসল ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা অত্যন্ত দূরূহ। আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের ফসল সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদন করলে প্রথমদিকে ফলন অনেক কম হয়। পরে আস্তে আস্তে বাড়লেও রাসায়নিক পদ্ধতির সমান ফলন পাওয়া যায়না। আর দেশি ফসলে ফলন এমনিতেই অনেক কম। তাই কৃষকেরা এসব চাষ করা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। তাই সম্পূর্ণ জৈব ও ভেজালমুক্ত খাদ্যের দাম বেশি হবেই। সারাবিশ্বেই তাই। এজন্য ধনী দেশগুলো জৈব চাষীদেরকে বেশি বেশি ভর্তুকি দিয়ে জৈবচাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে যতটুকু ভর্তুকি দেওয়া হয় তার সবটাই যায় রাসায়নিক সারে। কাজেই বাজারদরে জৈব ফসল পাওয়া প্রায় অসম্ভব।